বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৩১ পূর্বাহ্ন
এস.এম. সাঈদুর রহমান সোহেল, খুলনা ব্যুরো::
খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ৮৫ শয্যার করোনা ডেলিকেডেট হাসপাতালের অবস্থান। কিন্তু বৃহস্পতিবারই প্রথমবারের মত এ হাসপাতালের সবগুলো বেড পূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে এ হাসপাতালের ফটকে এখন শোভা পাচ্ছে, ‘বিছানা খালি নাই’ লেখা একটি ব্যানার। যেটি ঝুলিয়েছেন খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক।
এদিকে, করোনা হাসপাতাল রোগীতে পূর্ণ হওয়া এবং সরকারি-বেসরকারি অন্য কোন হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন ভর্তি হতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। করোনা হাসপাতাল থেকেই তাদের বলা হচ্ছে- কোনো রোগী মারা গেলে অথবা হাসপাতাল ছেড়ে গেলেই কেবল বেড খালি হবে। তবে, রোগীদের সহসাই হাসপাতাল ছাড়ার সম্ভাবনা না থাকায় বেড খালির জন্য ভর্তিচ্ছু রোগীদের অন্য রোগীর ‘মৃত্যুর জন্যই অপেক্ষা’ করতে হচ্ছে।
এ অবস্থায় করোনা রোগীদের জন্য এক ধরণের অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চরম উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন খুমেক হাসপাতাল পরিচালক ডা. মুন্সি মো. রেজা সেকেন্দার নিজেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ি খুলনা করোনা হাসপাতালে ৮৫টি এবং খুমেক হাসপাতালের ফ্লু কর্ণারের করোনা ওয়ার্ডে ১৫টি মিলে মোট ১শ’ শয্যা প্রস্তুত করা হয় করোনা রোগীদের ভর্তির জন্য। বৃহস্পতিবার করোনা হাসপাতালের ৮৫টি বেডই পূর্ণ হয়ে যায় এবং খুমেক হাসপাতালের ফ্লু কর্ণারেও ছিল ১৩জন রোগী। ফলে মোট ৯৮জন রোগী বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এদিকে, করোনা হাসপাতালে কোন বেড খালি না থাকায় হাসপাতালের পরিচালকের নির্দেশে গেটের সামনে ‘বিছানা খালি নাই’ মর্মে একটি ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে এ ব্যানারটি ঝুলানো হয়। ঝুলানো ব্যানার এবং হাসপাতালে বেড সংকট প্রসঙ্গে করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জনৈক রোগীর স্বজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বেড ফাঁকা না থাকায় রোগী ভর্তি হতে পারছে না। ফলে একজন ভর্তির জন্যভ অন্যো একজনের ‘মৃত্যু।র জন্য অপেওক্ষা’ করতে হচ্ছে।
তিনি আরও মন্তব্য করেন, ‘সিভিল সার্জন অফিস খাতা কলমে স্পেস তৈরি করে রেখেছে এক মাস আগে। এখন পর্যন্ত একজন রোগীও সেখানে ভর্তি করা হয়নি। সিভিল সার্জনকে ফোন দিলে বলে ডায়াবেটিক হাসপাতাল ভরে গেলে তারা ব্য বস্থা করবে। কিন্তু ডায়াবেটিক হাসপাতালে সিট খালি না থাকার কারণে ফ্লু কর্ণার থেকে বুধবার থেকে পজেটিভ হওয়া রোগীদের অনেকেই ওই হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে না। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গাজী ও সিটি আছে প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে। সব মিলে হৃদয় বিদারক অবস্থা।’
বিষয়টি স্বীকার করে খুমেক হাসপাতাল পরিচালক ডা. মো. মুন্সি রেজা সেকেন্দার এ প্রতিবেদককে বলেন, এর আগে ৮৭-৮৮টি বেড পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবারই প্রথম করোনা হাসপাতালের সবগুলো বেডই পূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে আর রোগী ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে, সিভিল সার্জন কর্তৃক জেনারেল হাসপাতালে ৪০টি বেড এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও (৫০ শয্যার ওপরের) করোনা ইউনিট চালুর নির্দেশনা এখনও বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় ভর্তি হতে না পেরে রোগীগুলো কি রাস্তায় মারা যাবে- বলে হতাশার সুরে পাল্টা প্রশ্ন রাখেন হাসপাতাল পরিচালক।
এ বিষয়ে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবনের চতুর্থ তলায় করোনা ইউনিট চালুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। সেখানে অক্সিজেন প্লান্ট এবং সেন্ট্রাল গ্যাস পাইপ লাইনসহ অন্যান্য কাজ করা হচ্ছে। এসব কাজ সম্পন্ন করতে করতে কমপক্ষে দেড় মাস লাগবে। বেসরকারি হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালুর বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, প্রাথমিকভাবে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০টি এবং ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালে ৩০টি বেড চালুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা প্রস্তুতিও শুরু করেছেন। পরবর্তীতে সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আদ্বদীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও করোনা ইউনিট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ৪০টি বেড এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও (৫০ শয্যার ওপরের) করোনা ইউনিট চালুর জন্য সরকার গত ২৪ মে নির্দেশনা জারি করে। কিন্তু প্রায় দেড় মাস পার হতে গেলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী খুলনা মহানগর ও জেলায় ২ হাজার ১২৩জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ২৭জন।